“সূরা নাসর: অর্থ এবং তাফসীর, এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এর জীবন কাহিনী”
সুরা নাসর এর অর্থ –
An-Nasr 110:1
إِذَا جَآءَ نَصْرُ ٱللَّهِ وَٱلْفَتْح
যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে
An-Nasr 110:2
وَرَأَيْتَ ٱلنَّاسَ يَدْخُلُونَ فِى دِينِ ٱللَّهِ أَفْوَاجًا
এবং তুমি মানুষকে দেখবে দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করছে,
An-Nasr 110:3
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَٱسْتَغْفِرْهُۚ إِنَّهُۥ كَانَ تَوَّابًۢا
তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করো ও তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো।২ নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল।
সুরা নাসর এর তাফসির-
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উবাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেনঃ “সর্বশেষ কোন সূরাটি অবতীর্ণ হয়েছে তা কি তুমি জান?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “হ্যা, সূরা ইযাজাআ নাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতহু’ (সর্বশেষ অবতীর্ণ হয়েছে।)” হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) তখন বললেনঃ “তুমি সত্য বলেছো।” (এ হাদীসটি ইমাম নাসায়ী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বয়স্ক মুজাহিদদের সাথে হযরত উমার (রাঃ) আমাকেও শামিল করে নিতেন। এ কারণে কারো কারো মনে সম্ভবতঃ অসন্তুষ্টির ভাব সৃষ্টি হয়ে থাকবে। একদা তাদের মধ্যে একজন আমার সম্পর্কে মন্তব্য করলেনঃ সে যেন আমাদের সাথে না থাকে। তার সমবয়সী ছেলে আমাদেরও তো রয়েছে।” তার এ মন্তব্য শুনে হযরত উমার (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ তোমরা তো তাকে খুব ভাল রূপেই জান!” একদিন তিনি সবাইকে ডাকলেন এবং আমাকেও স্মরণ করলেন আমি বুঝতে পারলাম যে, আজ তিনি তাদেরকে কিছু দেখাতে চান। আমরা সবাই হাজির হলে তিনি সকলকে জিজ্ঞেস করলেনঃ اِذَا جَآءَ نَصْرُ اللّٰهِ وَ الْفَتْحُ সূরাটি সম্পর্কে তোমাদের অভিমত কি (অর্থাৎ এ সূরাটি কিসের ইঙ্গিত বহন করছে)।” কেউ কেউ বললেনঃ “এ সূরায় আল্লাহ তাআলার গুণগান করার জন্যে এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্যে আমাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা’আলার সাহায্য এলে এবং আমাদের বিজয় সূচিত হলেই যেন আমরা এইরূপ করি।” কেউ কেউ আবার সম্পূর্ণ নীরব থাকলেন, কিছুই বললেন হযরত উমার (রাঃ) তখন আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমার মতামতও কি এদের মতই?” আমি উত্তরে বললামঃ না, বরং আমি এই বুঝেছি এ সূরায় রাসূলুল্লাহর (সঃ) পরলোক গমনের ইঙ্গিত রয়েছে। তাঁকে এটা জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, তার ইহলৌকিক জীবন শেষ হয়ে এসেছে। সুতরাং তিনি যেন তাঁর প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করেন ও তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন। একথা শুনে হযরত উমার (রাঃ) বললেনঃ “আমিও এটাই বুঝেছি।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) (তাফসিরে ইবনে কাছীর)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনি :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এর নাম আব্দুল্লাহ। পিতার নাম আব্বাস। মাতার নাম লুবাবা।
জন্ম: রাসুল (সা.) মদীনায় হিজরতের ৩ বছর পুর্বে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) জন্মগ্রহণ করেন।
জন্মের পরপর তাকে রাসুল (সা.) থুথু দিয়ে তাহনিক করে দেন। রাসুলের ইন্তেকালের সময় তার বয়স ১৩ বছর ছিল। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এর মা লুবাবা হিজরতের পুর্বেই ইসলাম কবুল করেন তাই আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) শৈশব থেকেই মুসলিম ছিল।
তিনি আলী (রা.) এর শাসনামলে বসরার গভর্নর নিযুক্ত হন। তিনি সিফফিনের যুদ্ধে সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
সর্বাধিক হাদিস বর্ননাকারী ৬ জনের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস একজন। তিনি প্রায় ১৬৬০ টি হাদিস বর্ননা করেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ৬৮ হিজরি সনে ৭১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।