Manners of Daily Life
ম্যানার্স /আদব অর্থ বিনয় ও নম্রতা ভদ্রতা সভ্যতা। এটি ইংরেজি শব্দ আর আদব আরবি শব্দ থেকে এসেছে। আদবের আরেকটি পরিচয় হলো মানবতা।
আচ্ছা এখন আসি মূল কথায় আমাদের জীবনে কি আদব বা ম্যানার্স এর কোন প্রয়োজনীয়তা আছে? অথবা আমাদের সন্তানদের আদক শেখানো কি কোন প্রয়োজন আছে?
ধরুন আপনি রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলাচল করছেন, কিন্তু রাস্তার ডান দিকে চলাচল করা হচ্ছে একটি আদব। আর রাস্তার মাঝখানে চলাচল করলে কি হবে তা আমাদের সবার জানা আছে। অথবা আপনি খাবার খাচ্ছেন কিন্তু ডানে-বামে খাবার গুলো পরে যাচ্ছে তাহলে কেমন দেখা যাবে? অথবা বিয়ে বাড়িতে খাবার দিতে দেওয়ায় আপনি মারামারি শুরু করেছেন তাহলে কেমন হবে ব্যাপারটা?
এইসব ক্ষেত্রে যে কেউ আপনাকে বলে উঠতে পারে কি অভদ্র! কি অসভ্য! বেয়াদব। তাহলে আপনি বলুন জীবনে কি আদব এর প্রয়োজনীয়তা আছে? আমি বলব অবশ্যই আছে।
আরেকটি ব্যাপার হলো আপনি কেন আপনার শিশুকে আসব/ম্যনার্স শেখাবেন? আপনি চিন্তা করলেন বড় হলে এমনিতেই শিখবে কিন্তু আসলেই কি তাই? ২০/২৫ বছরে এ গিয়ে কি কেউ আদব শিখতে পারে? হয়তো শুধু মুখস্ত করতে পারবে কিন্তু আদব মুখস্ত করার বিষয় না।
আদব হল নিজের মধ্যে ইংক্লিমেন্ট করার বিষয়। এমন না যে আপনি মেহমানদের সামনে মানবেন কিন্তু অন্য সময় মানবেন না বরং নিজের মধ্যে এভাবে সেট করতে হবে অথবা নিজের বাচ্চার মধ্যে এইভাবে সেট করে দিতে হবে যে এটাই যেন হয় তার স্বভাব হয়।
এই নম্রতা ভদ্রতা সভ্যতা এগুলোর মানে হল কোন কাজের সৌন্দর্য। যদি কোন কাজের সৌন্দর্য না থাকে তাহলে সেটা তো আপনি গ্রহণ করবেন না তাহলে অন্য কেউ কিভাবে গ্রহণ করবে?
যিনি সকল কাজের সৌন্দর্য বজায় রাখতেন তিনি হচ্ছেন আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কথা বলার ক্ষেত্রে খাওয়ার ক্ষেত্রে ঘুমানোর ক্ষেত্রে মজলিসে এমনকি ইস্তিঞ্জার ক্ষেত্রে কিভাবে আদব রক্ষা করতে হবে কিভাবে সৌন্দর্য বজায় রাখা যায় এই ব্যাপারে আমাদের রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বোচ্চ চুড়ায়।
যেহেতু সর্বক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুগত্যের আদেশ এসেছে তাই এই আদব ও সৌন্দর্য শিখব আমরা রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম এর জীবন থেকে। তাহলে ইনশাল্লাহ আমাদের প্রতিটা কাজই আদব রক্ষা হবে বা সৌন্দর্য বজায় থাকবে।
আমরা প্রথমে দৈনন্দিন জীবনের কিছু আদব শিখব।
ঘুমানোর সময়ে পালনীয় ১০টি সুন্নাত ও আদব
- ভালোভাবে বিছানা ঝেড়ে নেয়া
- ঘরের দরজা আল্লাহর নামে বন্ধ করা।
- ঘুমানোর সময় দু’আ পাঠ করা।
- ডান কাৎ হয়ে শোয়া।
- উপুড় হয়ে না শোয়া।
- দুঃস্বপ্ন দেখলে পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোয়া দুঃস্বপ্ন দেখলে প্রথমে বাম দিকে তিনবার থুথু ছিটা এবং “দুঃস্বপ্ন ও শয়তান থেকে -হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই” এভাবে তিনবার বলা । দুঃস্বপ্ন কাউকে না বলা।
- ঘুমানোর সময় আগুনের বাতি জ্বালিয়ে না রাখা।
ঘুম থেকে উঠে দোয়া পড়া।
খাবারের সুন্নাত ও আদবসমূহ
- হাত ধুয়ে শুরু ও শেষ করা
- দস্তরখান বিছিয়ে খাওয়া
- খাবার গ্রহণের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা
- ডান হাত দিয়ে খাওয়া
- আঙুল চেটে খাওয়া
- পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খাওয়া।
- খাবারের দোষ-ত্রুটি না ধরা
- খাবারে ফুঁ না দেওয়া
- খাবারের শেষে দোয়া পড়া।
বাচ্চাদের এই আদব গুলোর উপর আগ্রহ তৈরি করতে আমরা কিছু ক্রাফট করাতে পারি। (ছবি ইন্টারনেট থেকে কালেক্টেড)
এস্তেঞ্জার আদব/ ওয়াসরুমে যাওয়ার আদব
- লোকজনের সামনে,রাস্তার পাশে,গাছের নিচে,কবরস্থানে,গর্তে এস্তেঞ্জা করা যাবেনা।
- অযু ও গোসলের স্থানে এস্তেঞ্জা করা যাবেনা।
- পূর্ব- পশ্চিম দিকে (কিবলামুখী হয়ে) এস্তেঞ্জা করা যাবেনা।
- আবদ্ধ পানিতে এস্তেঞ্জা করা যাবেনা।
- এস্তেঞ্জার সময় বাম পা দিয়ে প্রবেশ করতে হবে এবং দোয়া পড়তে হবে।
- মাথা ঢেকে রাখতে হবে।
- লেখাপড়া, কোরান তেলাওয়াত করা,ও কথাবলা যাবেনা।
- ঢিলা, কুলুখ/ টিস্যু ব্যবহার করতে হবে।
- প্রয়োজনের অতিরিক্ত সতর না খোলা।
- ডান পা দিয়ে বাহির হওয়া ও দোয়া পড়া।
কাপড় পড়ার আদব
- ঢিলেঢালা ও সাদা পোশাক পরিধান করা উত্তম।
- জামা- পায়জামা সহ সকল পোষাকে ডান পা ও ডান হাত আগে প্রবেশ করানো।
- ছেলেদের জন্য টাখনুর উপরে কাপড় রাখা এবং মেয়েদের জন্য টাখনু ঢেকে রাখা।
- নতুন কাপড় পড়ার সময় দোয়া পড়া।
- পায়জামা বসে পরিধান করা উত্তম।
- ছেলেদের জন্য টুপি ও পাগড়ি পরিধান কর।
- প্রানীর ছবিযুক্ত কাপড় না পড়া
- ছেলেদের পোশাক মেয়েরা এবং মেয়েদের পোশাক ছেলেরা না পড়া।
- কাপড় খোলার সময় দোয়া বিসমিল্লাহ্ বলা।